নিজের বাবা মাকে গুলি করে হত্যা করেন নেপালের রাজপুত্র
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১:৪৭, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
FacebookTwitterEmailWhatsAppLinkedInMessengerShare
নিজের বাবা মাকে গুলি করে হত্যা করেন নেপালের রাজপুত্র
২০০১ সালের ১ জুন নেপালের রাজপরিবারে ঘটে যাওয়া এক ভয়ংকর হত্যাকাণ্ড আজও অনেকের মনে আতঙ্ক তৈরি করে। সেদিন এক পারিবারিক নৈশভোজে রাজা বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ দেব, রানী ঐশ্বর্য, তাদের তিন সন্তান এবং রাজপরিবারের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তবে আনন্দের সেই মুহূর্ত মুহূর্তেই রক্তস্নাত ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়।
হত্যাকাণ্ডের বিবরণ
সন্ধ্যায় সবাই যখন মদ্যপান ও আলাপচারিতায় ব্যস্ত, তখন যুবরাজ দীপেন্দ্রকে পানীয় পরিবেশন করতে দেখা যায়। এরপর তিনি হঠাৎ বাইরে চলে যান এবং কমান্ডো পোশাকে দুটি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে ফিরে আসেন। ফিরে এসেই তিনি তার বাবা রাজা বীরেন্দ্রকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। রাজা 'তুমি কী করছো?' বলার আগেই তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিথর হয়ে পড়েন। এরপর একে একে রানী ঐশ্বর্য, রাজকন্যা শ্রুতি এবং রাজপরিবারের আরও পাঁচ সদস্যকে গুলি করে হত্যা করেন দীপেন্দ্র। সবশেষে তিনি নিজেকেও গুলি করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং তিনি কোমায় চলে যান। অদ্ভুতভাবে, কোমায় থাকা অবস্থাতেই তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু মাত্র তিন দিন পর, ৪ জুন, তিনি মারা যান।
হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে সম্ভাব্য কারণ
সরকারি তদন্তে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দীপেন্দ্রকেই দায়ী করা হয়েছিল। তবে কেন তিনি এমন ভয়ংকর পদক্ষেপ নিলেন, সেই প্রশ্ন আজও থেকে যায়। সবচেয়ে আলোচিত তত্ত্বটি হলো, এটি ছিল দীপেন্দ্রর প্রেমের করুণ পরিণতি। তিনি দেবজানি রানা নামের এক নারীকে ভালোবাসতেন, যিনি ভারতের রাজপরিবারের সদস্য ছিলেন। রাজপরিবার এবং দেবজানির পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি। রানী ঐশ্বর্য চেয়েছিলেন তার ছেলে যেন অন্য কোনো রাজকন্যাকে বিয়ে করে। অন্যদিকে, দেবজানির পরিবারও এই বিয়েতে অনিহা প্রকাশ করেছিল, কারণ তাদের মতে, নেপালের রাজপরিবার তখন আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে দুর্বল ছিল। এই প্রত্যাখ্যান দীপেন্দ্র মেনে নিতে পারেননি। কারও মতে, সেদিন পার্টিতে তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়েন এবং ক্ষোভের বশে হত্যাকাণ্ডটি ঘটান।
রাজতন্ত্রের পতন ও বর্তমান পরিস্থিতি
দীপেন্দ্রর মৃত্যুর পর তার কাকা জ্ঞানেন্দ্র শাহ সিংহাসনে বসেন। কিন্তু জনগণের অসন্তোষ, গণআন্দোলন এবং গণতন্ত্রের দাবির মুখে ২০০৮ সালে নেপালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়। রাজপ্রাসাদ এখন একটি জাদুঘরে পরিণত হয়েছে, যেখানে দর্শনার্থীরা সেই ভয়াবহ রাতের ইতিহাস জানতে যান।
দুই দশক পর আবারো নেপালের রাজনীতিতে টালমাটাল পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি অপসারিত প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি অভিযোগ তুলেছিলেন যে, সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র সাম্প্রতিক বিক্ষোভে সহিংসতা উসকে দিয়েছেন। যদিও জ্ঞানেন্দ্র প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন যে, গণতন্ত্রের চেয়ে বড় কোনো ব্যবস্থা নেই নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষার জন্য। তবে রাজতন্ত্রপন্থীদের আন্দোলন আবারও অতীতের সেই স্মৃতি উসকে দিচ্ছে।
নিজের বাবা মাকে গুলি করে হত্যা করেন নেপালের রাজপুত্র
sumon_99
0
Post a Comment